১.
-ম্যাডাম আমি অনেক করে বুঝিয়েছি তবু ছেলেটি শুনছে না। বলছে আপনার গ্রামের ছেলে একবার দেখা করেই চলে যাবে।’
-ঠিক আছে পাঠিয়ে দাও। আর শুনো আগামী এক ঘন্টা কোন ফোন আমাকে দিবে ন্।া’
রোকেয়া বেগম ছেলেটির দিকে তাকালেন ,গ্রামের সহজ সরল অবয়ব। তবে দেখতে খুব মিষ্টি।
প্রায় পচিশ বছর তিনি গ্রামে যান না ।এতদিন পর ছেলেটির মুখ থেকে গ্রামের নাম শুনে অদ্ভুত একটা ভালো লাগা
তৈরী হলো তাঁর।
-ম্যাডাম যে কোন এ কটা কাজ দিন। এম এ. পাশের যোগ্যতায় না হোক এইট পাশের একটা কাজ হলেও চলবে।’
রোকেয়া বেগম মুচকি হাসলেন। ছেলেটাকে তার বেশ ভালোই লাগছে।আর নিজ গ্রামের ছেলে বলেই কিনা বেশ
কাছের আপন আপন মনে হচ্ছে।এরই মধ্যে কফি এসে গেছে। রোকেয়া বেগম কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন
-কি যেন তোমার নাম?
-রুদ্র রহমান’
-শোন, রুদ্র,তুমি আমার সš—ান তুল্য তার উপর গ্রামের ছেলে।আপন ভেবেই বলছি, চাকরী হয়ত দিতে পারছিনা
তবে অন্য একটা কাজ যদি দিই,একটু জটিল, সেনসেটিভ আর সিক্রেট পারবে?’
-আপনি দিলে সব কাজই পারব ম্যাডাম।’
- সমস্যা হলো আমার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে।তোমাকে আমি ব্যাপারটা খুলে বলছি।
আর তোমার কাজটা কি সেটাও বলে দিচিছ।’
তাঁর একমাত্র মেয়ে অনীলা একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে এমবিএ
পড়ছে। স¤প্রতি উনাদের পরিচিত এক ছেলের সাথে বিয়ের পারিবারিক আলাপ শুরু হলে
অনীলা স্পষ্ট ও দৃঢ়তার সাথে জানিয়ে দেয় সে একটি ছেলেকে ভীষন ভালোবাসে তাকে ছাড়া সে পৃথিবীর আর
কাউকেই বিয়ে করবেনা। রোকেয়া বেগম এরপর বলতে থাকেন ছেলেটি নাকি এতিম, কিছু করে না।
আরও ভয়ংকর তথ্য হলো ছেলেটি নাকি নেশা টেশা করে,সন্ত্রাসী কাজের সাথেও
জড়িত।
-বুঝেছ রুদ্র,আমি এমন কিছু করতেও পারছিনা পাছে আবার লোক জানাজানি হয়ে যায়।আমি ভীষন ভয়ে আছি। ’
-র্যা ব-পুলিশ দিয়ে ছেলেটাকে শায়েস্তা করা যায় না?’
-উ:হু, ব্যপারটা অত সহজ না। একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরী হলে
তা মিডিয়ায় চলে আসবে তাতে করে আমার এই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিটা চালানো খুব কঠিন হয়ে যাবে
আর মেয়েটাও একেবারে বিগড়ে যাবে।’
রোকেয়া বেগমের প্লান অনুসারে রুদ্র তাঁর বাড়ীতে মাস খানিক থাকবে,তাঁর
প্যারালাইজড স্বামীর তত্বাবধায়ক হিসেবে।বর্তমানে যে দেখাশুনা করে তাকে মাসখানিকের ছুটি দেওয়া হবে। রুদ্র
ধীরে ধীরে অনীলার বন্ধু হয়ে যাবে তারপর ঐছেলের নানা রকম অপকর্মের তথ্য প্রমান হাজির করবে। যাতে করে
অনীলা ঐ ছেলেকে ঘৃণা করে মন থেকে সরিয়ে দেয়।
-আর হ্যা এ জন্য তোমাকে এক লক্ষ টাকা আমি পারিশ্রমিক দেব। তবে তোমাকে একটা এগ্রিমেন্টে
সই করতে হবে। কাল থেকে তোমার মিশন শুরু হবে।’
২.
হুইলচেয়ারে বসা প্যারালাইজড এ আক্রাš— বাকশক্তিহীন লোকটাকে দেখে খুব মায়া হলো রুদ্র’র। রুদ্রকে দেখে তাচ্ছিল্লের হাসি হাসলো অনীলা । রুদ্র ঢোক গিলে রোকেয়া বেগমের দিকে তাকালো।
-অনীলা ছেলেটা আমার গ্রামের,তোমার বাবাকে দেখাশুনা করবে।রুদ্র’র কোন অমর্যাদা হলে আমি কিন্তু ভীষন কষ্ট পাবো।’
রোকেয়া বেগম রুদ্রকে নিজ কক্ষে নিয়ে গেলেন,আলমিরা থেকে একটা ছবি বের করে রুদ্র’র হাতে দিলেন।
-অনীলার রুম থেকে গোপনে ছেলেটার এই ছবিটা আমি নিয়ে এসেছি। এই ছেলেটা একেবারেই অচেনা।তুমি অনীলার বন্ধু হয়ে ছেলেটাকে চিনে নিবে।আর হ্যা অনীলার কোন বন্ধু যেন এ ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে,ওকে।’রুদ্র সম্মতি সূচক মাথা ঝাকালো।
-ম্যাডাম,ভিতরে আসতে পারি?’
-আপনি আমাকে ম্যাডাম বলছেন কেন! ’
-সরি। ক বলবো তাহলে?’
-কিছুই বলতে হবে না, এ বাড়ীতে কোন মতলবে ঢুকেছেন?’
-মতলব!'ঢোক গিললো রুদ্র।
-মা, আমার উপর নজরদারীর জন্য আপনাকে এনেছে তাই না?’
-ছি:ছি: তা কেন।আপনি রেগে যাচ্ছেন। অবশ্য আপনার মত রুচিশীল একজন মানুষের পক্ষে রাগ একদমই মানায় না।’
-ভালো নাটক জানেন তো আপনি!’
-না মানে,আপনি এতক্ষন যে গানটা শুনছিলেন ‘আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল..’ গানটি আমারও ভীষন পছন্দ।ু
-পিজ আপনি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যান।’
রুদ্র অনীলার রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
একটি রেস্টুরেন্টে বসে আছে রুদ্র।
-তাহলে আপনিই সেই?’
-ইয়েস,অ্যাই এ্যাম দ্যাট গাই,শাকিল। আর আপনি রুদ্রর তাইতো? আন্টি আমাকে সবই বলেছেন।’
-আপনি অনীলাকে বিয়ে করতে চাইছেন কেন?’
-ভেরী সিম্পল,ভীষন সুন্দরী,স্মার্ট আর বড়লোক মা বাবার একমাত্র মেয়ে। একসাথে রাজ্য আর রাজকন্যা।হা:হা:হা:.
-আপনি তো নিজেও প্রচন্ড ধনী।তার পরেও আরও চান!’
-ভেরী সিম্পল, ধনী আরও ধনী হতে চাই। হা:হা:হা:....’
-অনীলা য়ে ছেলেকে ভালোবাসে তাকে আপনি চিনেন?’
-না, আই ডোন্ট নো হিম।’
-ছেলেটা যে নেশা করে,সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত তা কি আপনি জানেন?’
-আরে এসব তো আমি বানিয়ে বানিয়ে আন্টিকে বলেছি যাতে অনীলার বিয়ে আমার সাথেই হয়। শুনুন মি: রুদ্র
আপনি যদি কাজটা করিয়ে দিতে পারেন তাহলে আই উইল পে ইউ ফাইভ লাক টাকা।’
-আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট মি:শাকিল।’
৩.
- মা,আমার কিছু শপিং আছে ,তোমার ঐ টিকটিকিকে সাথে নিয়ে যেতে চাইছি।’
-ছি: অনীলা একটা মানুষকে এভাবে অবমূল্যায়ন করতে নেই।আমি রুদ্রকে বলে দিচ্ছি তোর সাথে যাবার জন্য।
গাড়ি নিয়ে যা।’
রুদ্রকে সাথে নিয়ে অনীলা দিনভর শপিংমল, বইয়ের দোকান ও রেস্টুরেন্টে কাটালো। এরই মাঝে রুদ্র’র মোবাইলে মি: শাকিলের ফোন এলো। রুদ্র জানিয়ে দিল চিš—া না করতে,কাজ সঠিক পথেই এগোচ্ছে।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী। অনীলার ঘুম ভাঙলোুআমারও পরান যাহা চাই’..গানটি শুনে। সে অবাক হলো এত সকালে তার সিডি প্লেয়ারে গানটি কে চালালো! এরপর বেড থেকে নেমে পড়ার টেবিলের উপর একগুচ্ছ গোলাপ আর হ্যাপি ভ্যালেইনটাইন ডে’ লেখা একটা কার্ড দেখে আরও অবাক হলো সে। বিস্মিত হয়ে
ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা ড্রয়িং রুমে এলো যেখানে তার মা সকালের চা পান করছিল আর বাবাকে নাস্তা খাওযাচ্ছিল বাড়ীর কাজের বুয়া।
-মা,আমার রুমে সিডি প্লেয়ারে গান চালিয়েছে কে? আর ফুল কার্ড এসব কে রেখেছে।’
-জানি নাতো।’
-মা,তোমার ঐ টিকটিকি রুদ্র সে এসব করেছে তাই না? এত সাহস পায় কোথা থেকে সে! আর চেনা নেই জানা নেই একটা বাজে লোককে তোমরা বাসায় রেখেছ কেন?’
-অনীলা কুল ডাউন মা।রুদ্র খুবই ভালো ছেলে।’
-ভালো ছেলে! সে কি নেশা করে?’
-না, নেশা করবে কেন!’
-সে কি সন্ত্রাসী কাজে জড়িত?’
-কি সব আবোল তাবোল বকছিস! ’
- তুমি ঐ রুদ্র সম্পর্কে যা বলছো জেনে শুনে বলছো তো?’
-অফ কোর্স।’
-ওকে,মেনে নিলাম। অনেকক্ষন রাগারাগি করলাম এবার একটা ভালো সংবাদ দিতে চাই।তোমরা আমাকে যে ছেলেটার সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলে আমি তাকে বিয়ে করতে রাজি আছি। তবে তার আগে তোমাদের একট ভিডিও দেখাব।’ অনীলা য়ে ভিডিও দেখালো সেখানে দেখা গেলো একটা রেস্টুরেন্টে রুদ্র ও মি: শাকিলের আলাপচারিতা। ভিডিওটা দেখে প্রচন্ড ধাক্কা খেলেন রোকেয়া বেগম। বিস্মিত চোখে তাকালেন মেয়ের দিকে।
-মা,তোমার হেভী ডিমান্ডেড পাত্রকে তো দেখলাম। এবার আমার ভালোবাসার বেকার, এতিম, নেশা করা,সন্ত্রাসী টাইপের ছেলেটাকে তোমাদের দেখাবো। এই এদিকে এসো।’
অনীলার ভালোবাসার যে ছেলেটা রুমে প্রবেশ করলো তাকে দেখে প্রচন্ড চমকে গেলেন রোকেয়া বেগম।
-রুদ্র তুমি!’
-সরি আন্টি, আমি আর অনীলা ক’দিন ধরে এই নাটকটা করতে বাধ্য হয়েছি শুধুমাত্র আপনার ভুলটা ভাঙানোর জন্য। ’
রোকেয়া বেগম কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। একেবারে হতভম্ব হয়ে গেছেন তিনি। তাঁর গা হাত পা কাঁপছে।
২৯ জানুয়ারী - ২০১৫
গল্প/কবিতা:
১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪